ইসলামের
আলোকে করোনাভাইরাস উপশমে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
আল কুরআন
ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাক্বরাহ : ২২২)
Indeed, Allah loves those who keep themselves pure and clean (Surah Baqorah: Ayat: 222]
ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাক্বরাহ : ২২২)
Indeed, Allah loves those who keep themselves pure and clean (Surah Baqorah: Ayat: 222]
[Never stand thou forth therein. There is a mosque whose foundation was laid from the first day on piety; it is more worthy of thy standing forth (for prayer) therein. In it are men who love to be purified; and God loveth those who make themselves pure (Surah At Taubah: Ayat: 108)]
108. لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا ۚ لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّـهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
[সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।, (সুরা আত-তাওবা, আয়াত : ১০৮)]
Never stand thou forth therein. There is a mosque whose foundation was laid from the first day on piety; it is more worthy of thy standing forth (for prayer) therein. In it are men who love to be purified; and God loveth those who make themselves pure.
[সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।, (সুরা আত-তাওবা, আয়াত : ১০৮)]
উল্লেখ্য, মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার পাক-পবিত্রতা অবলম্বনকার লোকজনের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উপরোক্ত আয়াত নাজিল করেছেন।
আল হাদীসের আলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা
الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ
আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক (মুসলিম, হাদিস নং: ২২৩)
ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিপার্শ্বের পরিচ্ছন্নতা—কোনোটাই বাদ যায়নি। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুমাবারে গোসলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মিসওয়াকের গুরুত্ব
দাঁত ও মুখের যত্নের জন্য হাদিসে মিসওয়াকের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মিসওয়াক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি না আমার উম্মত অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের জন্য কঠিন হত তবে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৮৮৭; মুসলিম )
চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলাম
চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায়ও ইসলামে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে বেড়াতে এলেন। আসার পর তিনি এলোকেশী এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে?’ ময়লা কাপড় পরিহিত আরেকজনকে দেখে তিনি বলেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে?’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ১৪৮৫০; বায়হাকি, হাদিস)
পরিচ্ছন্নবান্ধব দশটি মানব ‘ফিতরাত’
হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দশটি বিষয় ‘ফিতরাত’র অন্তর্ভুক্ত: গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধোয়া, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো, (মলমূত্র ত্যাগের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমিও ভুলে গেছি,সম্ভবত কুলি করা।’ (মুসলিম, হাদিস)
ঘরবাড়ী পরিচ্ছন্ন রাখতে হাদিসে গুরুত্বারোপ
ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আবাস স্থানকেও নোংরা, আবর্জনা ও দৃষ্টিকটু উপাদান থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় এর বিকল্প নেই। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন। আল্লাহ পরিচ্ছন্ন। তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ব পছন্দ করেন, আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। [তিরমিজি)
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্ত হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, লানতকারী কাজ দুইটি কী? তিনি বলেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৫; মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং: পরিবেশ দূষণ রোধেও হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, অতঃপর তা দিয়ে গোসল করে।’ (বুখারি, হাদিস নং: ২৩৯; মুসলিম)।
খাদ্য ও পানীয়কে দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা
খাদ্য ও পানীয়কে দূষণমুক্ত রাখতে পাত্র ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা বাসন ঢেকে রাখো। পানপাত্রের মুখ বন্ধ রাখো। দরজা কপাটবদ্ধ করো এবং এশারের সময় তোমাদের শিশুদের ঘরের ভেতরে রাখো। কেননা, এ সময় জিনরা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রভাব করে। আর তোমরা নিদ্রাকালে বাতিগুলো (প্রদীপ) নিভিয়ে দিও। কেননা ইঁদুর কখনো প্রদীপের সলতে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর তা গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৩৩১)
ইসলামে ওযুর গুরুত্ব ও উপকারিতা
ইসলামি বিধান মতে অযু হল দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি উত্তম পন্থা। যার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যায় এবং এর মাধ্যমে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত গুলের মধ্যে বিশেষ করে নামাজ আদায় ও কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। সালাত বা নামাজ এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করা প্রয়োজন । কারণ পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহ তাআলার কাছে নামায গৃহীহ হবে না। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদঃ ﻻَ ﻳَﻘْﺒَﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺻَﻼَﺓَ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺣْﺪَﺙَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﻮَﺿَّﺄَ“
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের কারও নামায গ্রহণ করবেন না, যখন সে অপবিত্র হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে অযু করে। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী “নামাজকে বলা হয় জান্নাতের চাবি আর ওযুকে বলা হয় নামাজের চাবি। অনুরূপভাবে কুরআন শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও অযুর প্রয়োজন হয়। পবিত্র কোরানে আছে -“যাহারা পূত-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করো না ] (সূরা ওয়াকিয়াহ্)।
অযুর ফরজ ফরজসমূহঃ
১.মুখমন্ডল পরিপূর্ণ ধৌত করা। ২. দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধৌত করা। ৩. মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা (ভেজা হাত মাথায় বুলানো) । ৪. দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত উত্তম রুপে ধৌত করা।
এ ফরজগুলি ছাড়াও আছে কিছু সুন্নাত ও মুস্তাহাব কাজ যার মাধ্যমে সুন্দরভাবে ওযু করা সম্ভব। তবে ফরজের কোন একটি কাজ বাদ পড়লে ওযু হবে না ।
অযুর সর্বপ্রথম সূন্নাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই হচ্ছে উভয় হাত কবজিসহ অন্ততঃ ৩ (তিন) বার পরিস্কার পুতঃপবিত্র পানি দ্বারা ধৌত করা।
শরীয়তে ইসলামের অপরিহার্য বিধান অযুর নিরিখে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপন মানবোতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বটে। বিশেষ করে বর্তমানে বিদ্যমান করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর বিশ্বব্যাপী অব্যাহত ছোবলের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস আরও বেশী তাৎপর্য বহন করছে।
বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস
(সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়া, বিশ্বকোষ)
বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস
| |
পানি, সাবান ও হাতের সমন্বয়ে তৈরী বিশ্ব হাতধোয়া দিবসের লোগো
| |
উদযাপন
|
আমাদের হাত, আমাদের ভবিষ্যত্
|
তারিখ
| |
সংঘটন
|
বার্ষিক
|
প্রথম বার
|
১৫ অক্টোবর ২০০৮
|
বিশ্ব হাতধোয়া দিবস বিশ্ব ব্যাপী জনসচেতনতা তৈরী ও উদ্বুদ্ধ করণের জন্য চালানো একটি প্রচারণামূলক দিবস। প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর তারিখে বিশ্ব ব্যাপী এটি পালিত হয়ে থাকে। জনসাধারণের মধ্যে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করার বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করার উদ্দেশ্যে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এটি প্রথমবারের মত উদযাপন করা হয় ১৫ অক্টোবর, ২০০৮ সালে। এই দিবসের লগো হচ্ছেঃ "আমাদের হাত আমাদের ভবিষ্যত"। লগোটি মানব জীবনে সুদূরপ্রসারী এবং তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যায়নের দাবী রাখে।
উল্লেখ্য, কর্ম মানব জীবনের এক অত্যাবশ্যকীয় বিধান। শক্তিশালী, নিরোগ হাত যেমন কর্মের জন্য উপযুক্ত তেমনি এই হাত বিপদের কারণ হতে পারে যদি আমরা যথাযথভাবে আমাদের হাতের যত্ন না নিই। আমরা হাত দিয়ে শুধু কাজই করি না অধিকন্ত্ত আমরা এক হাতে খাবার খাই অপর হাতে শৌচের কাজ করে থাকি। খাওয়ার জন্য যেমন যথাযথভাবে হাত ধোয়া জরুরী তেমনি শৌচের পরও হাত ধোয়া জরুরী। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত অভিমতঃ মানুষের প্রস্রাব এবং পায়খানায় রোগ জীবানুর বিপুল সমাহার থেকে। এ কারণে প্যাথোলজিক্যাল টেস্টে রোগীর প্রস্রাব এবং পায়খানা এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বটে। সুতরাং টয়লেট সারানোর পর শৌচের মাধ্যমে হাত জীবানুযুক্ত হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর হচ্ছে ওয়াশরুম থেকে বেরুনোর অআগে ভালভাবে হাত ধোয়া। তাছাড়া, ময়লাযুক্ত হাতে থাকতে পারে নানান ধরণের রোগ জীবাণু। তাই খাওয়ার অআগে হাত ধোয়া জরুরী। ইসলামী শরীয়াহমতে যা সুন্নাত-ই-রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বাস্তবায়ন এবং ব্যবস্থাপনা
সাবান দিয়ে হাতধোয়ার বৈশ্বিক এবং স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করার জন্য বিশ্ব হাতধোয়া অংশীদার (GHP) (পূর্বে নাম ছিল "হাত ধোয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব" (PPPHW)) ২০০৮ সালে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস চালু করে।[২]
লক্ষ্য:
· সকল সমাজের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার একটি সাধারণ সংস্কৃতির সমর্থন ও প্রচলন করা;
· প্রতিটি দেশে হাত ধোয়ার বিষয়ের নজর দেয়া;
· সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার উপকারীতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের ইতিহাস
বিশ্ব পানি সপ্তাহে সুইডেনের স্টোকহোমে ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাতধোয়া অংশীদার (GHP) বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম এই দিবসটি উদযাপন করে।[৩] পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তারিখটি প্রতি বছর পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০০৮ সালটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার আন্তর্জাতিক বর্ষও ছিল। ২০০৮ সালে দিবসটি পালনে প্রতিষ্ঠাতা সংস্থাগুলির মধ্যে ছিল: FHI360 (আমেরিকা ভিত্তিক একটি অলাভজনক মানব উন্নয়ন সংস্থা), রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র, প্র্যাক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল, ইউনিসেফ, ইউনিলিভার, বিশ্বব্যাংকের পানি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রোগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন জন্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।
তথ্যসূত্র:
1. ↑ Rai, Frank (১২ আগস্ট ২০০৯)। "Lae Marks Global Handwashing Day"। Post-Courier (Papua New Guinea)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৫ – Newspaper Source – EBSCO-এর মাধ্যমে।
2. ↑ ঝাঁপ দাও:ক খ "Global Handwashing Day" । MMWR. Morbidity and Mortality Weekly Report। 61 (40): 821। ১২ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৫।
3. ↑ "The Global Public Private Partnership for Handwashing – Our History"। The Global Public Private Partnership for Handwashing। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫।
সুন্নাত ও বিজ্ঞানের আলোকে মিসওয়াক
মিসওয়াক কি?
The miswak (miswaak, siwak, sewak, Arabic: سواك or مسواك) is a teeth cleaning twig made from the Salvadora
persica tree (known as arāk, أراك, in Arabic).
It is reputed to have been used over 7000 years ago.[1] The miswak's properties
have been described thus: "Apart from their antibacterial activity which
may help control the formation and activity of dental plaque, they can be used
effectively as a natural toothbrush for teeth cleaning. Such sticks are
effective, inexpensive, common, available, and contain many medical
properties".[2] It also features prominently in Islamic hygienical jurisprudence.
The miswak is
predominant in Muslim-inhabited
areas. It is commonly used in the Arabian
peninsula, the Horn of Africa, North Africa,
parts of the Sahel,
the Indian subcontinent, Central Asia and Southeast Asia.[citation
needed] In Malaysia, miswak is known as Kayu Sugi (Malay for
'chewing stick').
( Courtesy of Wikipedia, Encyclopedia)
মিসওয়াক আরবি শব্দ, যার বাংলা প্রতিশব্দ ‘দাঁতন’। সাধারণত মিসওয়াক বলতে আমরা বুঝি, দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করার জন্য যে বিভিন্ন গাছের
ডাল ও কাষ্ট টুকরা ব্যবহার করা হয় তাই মিসওয়োক। আরবদেশে সাধারণত দাঁত পরিষ্কার ‘স্যালভাদরা
পারসিকা’ নামক গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা হতো। যাকে আরবিতে
‘আরাক’ গাছও
বলা হয়। তবে মিসওয়াক হিসেবে পিলু, নিম, বাবলা,কানির, জায়তুন,
জাতীয় তেঁতো, লবনাক্ত গাছের নরম
আশঁযুক্ত ডাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ সব গাছ ছাড়াও বিভিন্ন গাছের ডালকে মিসওয়াক
হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সুন্নাতের
আলোকে মিসওয়াক
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: ইসলামে মিসওয়াকের গুরুত্ব অপরিসীম।
রাসূল (সা.) তাঁর অসংখ্য হাদিসে মিসওয়াকের ব্যাপারে গুরুত্বরোপ করেছেন এবং তাঁর
উম্মতকে এর প্রতি উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রদান করেছেন। নিম্নে মিসওয়াকের গুরুত্বের
ব্যাপারে কতিপয় সহিহ হাদিস পেশ করা হলো-
বিখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বরেছেন, আমি
যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের
সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী হাদিস: ৮৮৭, ৭২৪০
ও মুসলিম হাদিস: ২৫২)।
আয়িশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের (প্রকৃতির) অন্তর্ভূক্ত ‘গোঁফ
খাটো করা, দাড়ি
লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে
পানি দেয়া, নখ কাটা,আঙ্গুলের
গিরাগুলো ঘষে মেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভীর নিচের লোম মুড়িয়ে ফেলা এবং মল-মূত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার
করা। যাকারিয়া বলেন, মুসআব বলেছেন, দশম কাজটি আমি ভুলে গেছি, তবে আমার ধারণা তা
হবে কুলি করা। (মুসলিম হাদিস: ৫১১,ই.ফা.)।
শুরাইহ্ বলেন আমি আয়িশাহ্ (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম রাসূল (সা.) যখন
গৃহে প্রবেশ করতেন তখন কোন কাজটি সর্বপ্রথম করতেন? আয়িশাহ্ (রা,) বললেন
মিসওয়াক করতেন। (মুসলিম হাদিস: ৪৯৮,ই.ফা.)।
আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি
মিসওয়াক করার ব্যাপারে তোমাদেরকে অত্যাধিক উৎসাহিত করেছি। (সুনান আন নাসায়ী,
হাদিস: ৬)।
মিসওয়াকের
উপকারিতা
মিসওয়াকের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। যেমন: রাসূল (সা.) এর বানী, ‘আয়িশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিক রাসূল (সা.) বলেছেন
মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিস্কার রাখে এবং তার দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত
হয়। (সুনান আন নাসায়ী, হাদিস:
৫)।
এছাড়াও মিসওয়াকের মাধ্যমে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় তা হলো: (১)
রাসূল (সা.) এর সুন্নাত আদায় হয়। (২) মিসওয়াককারীর মুখস্ত শক্তি বেড়ে যায়। (৩)
শয়তান অসুন্তুষ্ট হয়। (৪) প্রশান্তি ও স্বস্তি অর্জিত হয়। (৫) মুখ পরিষ্কার ও
পরিচ্ছন্ন হয়। (৬) মাথা ব্যথা দূর হয়। (৭) ক্ষতিগ্রস্ত চোখের রোগ দূর হয়। (৮)
প্লেগ রোগ দূর হয়। (৯) মুখ সুগন্ধি যুক্ত হয়। (১০) মাড়ি শক্ত হয়। (১১) কফ কেটে
যায়। (১২) ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ হয়। (১৩) মুখের লালাস্রাব বৃদ্ধি হয়। (১৪) দাঁতের
টিস্যু নিরাময় নিয়ন্ত্রণ করে।
বিজ্ঞানের
আলোকে মিসওয়াক
(ক) মিসওয়াক হলো জীবাণুনাশক: মিসওয়াক জীবাণু ধ্বংসকারী এন্টিসেপ্টিক এর কাজ
করে এবং এটা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। নতুন গবেষণা অনুযায়ী জানা যায়, মুখে এমন কিছু জীবাণু সৃষ্টি হয়, যা প্রচলিত ব্রাশ এবং পেষ্ট দ্বারা দূর হয় না। সেগুলোকে শুধুমাত্র
মিসওয়াকের মাধ্যমেই ধ্বংস করা যেতে পারে। তাই নিয়মিত মিসওয়াককারীর বিভিন্ন রোগ
তেকে বেঁচে থাকেন।
(খ) মিসওয়াক মস্তিষ্ককের সুস্থতা: চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, মিসওয়াক ব্যবহারের দ্বারা মস্তিষ্ককের সুস্থতা অটুট থাকে। মিসওয়াক ব্যবহার
না করলে মুখে ব্যাকটিরিয়া জন্মায়, এবং তা থেকে মাড়ি ও
চোয়ালে পুঁজ সৃষ্টি হয়-যা মস্তিষ্কের রোগের কারণ। এবং এর
ফলে হৃদরোগও হয়ে থাকে।
(গ) গলানালীর সুস্থতায় মিসওয়াক: যেসব রোগীর গলানালী আক্রান্ত হয় তারা সাধারণত
টনসিলের রোগী। এসব রোগী নিয়মিত মিসওয়াক করলে সুস্থ হয়ে যায়। যারা নিয়মিত মিসওয়াক
ব্যবহার করে তাদরে টনসিলের রোগ খুবই কম হয়। অনুরুপভাবে,যাদের গলানালী বড় হয়ে যায় তারাও নিয়মিত মিসওয়াক
করার দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
(ঘ) মিসওয়াক ও মুখের ঘা: কখনো কখনো গর্মি, দুর্গন্ধ এবং জীবাণুর কারণে মুখের ভেতর ফোঁড়া হয়ে
ঘা এর সৃষ্টি হয়। এগুলো কখনো প্রকাশ পায় আবার কখনো প্রকাশ পায় না, এটা খুবই কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর। এর জীবাণু পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে মুখকে
আক্রান্তস্থলে পরিণত করে। ফলে খাবার গ্রহণ মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রতিদিন নিয়মিত
মিসওয়াক করলে এবং লালা মুখের ভেতর উত্তমরুপে মিশে গেলে এ রোগ হয় না।
(ঙ) মিসওয়াক ও দাঁতের
স্বাস্থ্য: মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের খাদ্য ও
পানীয় গ্রহণ করে থাকে। আর এ সব খাবারের ছোট-ছোট কণা দাঁতের ফাঁকে জমতে থাকে,
যা সাধারণত কুলি করার দ্বারা দূর হয় না। ফলে মুখ ও দাঁতের
বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নিয়মিত মিসওয়াক করলে এরুপ সমস্যা থেকে মুক্তি
পাওয়া সম্ভব।
(চ) মিসওয়াক ও চোখ: মানুষের অমূল্য সম্পদ হচ্ছে দৃষ্টিশক্তি। দাঁতের
অপরিচ্ছন্নতা চোখের বিভিন্ন রোগের কারণ। কেননা দাঁতের সঙ্গে চোখের বিশেষ সংযোগ
রয়েছে। তাই দাঁত আক্রান্ত হলে চোখও আক্রান্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি কমতে
থাকে,যার দরুন এক সময়
চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত মিসওয়াক করলে এ ধরনের রোগ থেকে
পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
(ছ) মিসওয়াক ও কান: কিছু রোগী আবার এমন আছে যারা কখনো কখনো কানের
প্রদাহ, পুঁজ ও ব্যথায় কাতর থাকে। কারণ
অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, দাঁত ও মাড়ির সমস্যার কারণে
এরুপ হয়েছে। যখন দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসা এবংনিয়মিত তাজা মিসওয়াক করা হয় তখন কানও
ভালো হয়ে যায়।
(জ) মিসওয়াক ও পাকস্থলী: বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রায় ৮০ শতাংশ রোগ পাকস্থলী ও দাঁতের সমস্যার
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিশেষত; বর্তমানে প্রতি তিন ব্যক্তির
মধ্যে একজন পেটের রোগে আক্রান্ত। মিসওয়াক না করার ফলে মুখে, দাঁতে ও মাড়িতে জীবাণু জন্মায় এবং খাওয়ার সময় তা পাকস্থলীতে প্রবেশ
করে। ফলে পাকস্থলী ও জঠরের রোগ সৃষ্টি হয়। নিয়মিত মিসওয়াক করলে এধরনের রোগ হওয়ার
সম্ভাবনা খুবই কম।
(ঝ) মিসওয়াক ও কফ-কাশি: এমন রোগী যার কফ আটকে গেছে, সে যদি মিসওয়াক করে তবে ওই কফ ভেতর থেকে বের হতে
শুরু করে। প্যাথলজিস্টদের মতে, সার্বক্ষণিক সর্দির জন্য
মিসওয়াক প্রতিষেধকের কাজ করে। নিয়মিত মিসওয়াকের ফলে সর্দি, কাশি ও কফ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
(ঞ) মিসওয়াক ও হার্টের ঝিল্লি: প্রখ্যাত ডাক্তার এস এম ইকবাল বলেছেন যে, একবার
তার নিকট একজন রোগী এসেছিল যার হার্টের ঝিল্লিতে পুঁজ ছিল। বিভিন্ন চিকিৎসার পরও
সুস্হ হচ্ছিল না। সর্বশেষ হার্টের অপারেশন করে পুঁজ বের করা হয়। কিন্তু
দুর্ভাগ্যবশত পুঁজ আবার জমে গেলে অবশেষে রোগী হতাশ হয়ে সেই ডাক্তারের নিকট আসলো।
ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন যে তার দাঁতের মাড়িতে পুঁজ আছে এবং এ পুঁজই
তার হার্টে প্রভাব ফেলছে। তখন ডাক্তার তাকে দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত
মিসওয়াক করতে বললেন, যার ফলে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।
সম্পাদনায়ঃ -শেখ মুহাম্মাদ রমজান হোসেন।
সম্পাদনায়ঃ -শেখ মুহাম্মাদ রমজান হোসেন।
No comments:
Post a Comment